Friday, August 5, 2011

অনন্ত অম্বরে . . . .


            
 নীলা আর রবি। দুই দেহ এক প্রাণ। দু’জন দুজনকে ভালবাসে। খুব ভালবাসে। এটা বললে যেন কম বলা হয়। যেন কত জনমের তরে তারা দু’জন দুজনার। সকাল থেকে রবি ছটফট করছে। কখন ক্যাম্পাসে যাবে, কখন নীলা আসবে? ওরা ঠিক করেছে আজ বেড়াতে যাবে। দূরে বহুদূরে। যে দিকে দু চোখ যায়।
        রবি আগেই ক্যাম্পাসে চলে এসেছে। মনটা কেমন যেন উদাস। নীলা আসবে, কখন আসবে? আজ আসবে তো . . . . ?
                রবি বারান্দায় দাড়িয়ে নীলার কথা চিন্তা করছে। আজ পূর্ণিমা। পূর্ণিমা রবির খুব ভাল রাগে। সে চায় যেন পূর্ণিমা রাতেই সে চলে যায় পৃথিবী ছেড়ে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে দেখতেই যেন চলে যায়। বেড়ানোর কথা আগেই বলা আছে। তাহলে এত দেরি করছে কেন নীলা?  আচ্ছা আজ কি শাড়ী পরে আসবে নীলা? সবুজ শাড়ীতে খুব মানায় ওকেউহ, আজ যদি নীলা সত্যিই সবুজ শাড়ী পরে আসত? ওকে নিয়ে হাটবে সাগর পাড়ে। দু’জন দুজনার হয়ে একসাথে।
        দক্ষিণা বাতাস, আকাশে চাঁদ,নীলার সবুজ শাড়ী উড়ছে। যেন কল্পলোকের কল্পকথার রাজকুমার-রাজকুমারী। ভাবতে ভাততে একটা ঘোরের মধ্যে চলে আসে রবি ।
        হঠ্যাৎ কে যেন রবির কাধেঁ হাত রাখে। চমকে ওঠে ও। ওর সামনে দাড়িয়ে নীলা। সবুজ শাড়ী পরিহীতা নীলা। রবি তার চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। একি স্বপ্ন নাকি সত্যি? স্বপ্ন লোকের রাজকুমারী তার নিজের মনের মত করে তার সামনে দাড়িয়ে। নীলা মুগ্ধতা ভাঙল, একি এমন করে তাকিয়ে আছ কেন?
        -তোমাকে দেখছি
        -আমাকে তো মব সময় দেখ। আজ এমন করে দেখার কি হল?
        -জানি না, তবে আজ যেন কেমন অন্য রকম লাগছে?
        -তোমর শুধু পাগলামী। বল কোথায় যাবে?
        -যে দিকে দু’চোখ যায়, তোমার হাত ধরে আমি সেদিকে যাব।
নীলা কেমন যেন লজ্জা পেল। কিছুই বলছে না। রবি তার দিকে তাকিয়ে আছ। আজ মধু পূর্ণিমার রাত। আজ সারা দিন চলে যাব যে দিকে চোখ যায়। তার পর চলে যাব সাগর পাড়ে। নীলা এমনি কিছু কল্পনা করছিল। রবির হাত ধরে কোথাও হারিয়ে যাবে। সে সানন্দে রাজি হয়ে গেল। ঠিক হল আজ আর কলেজ নয়। ওরা চলতে শুরু করবে।
        তারা চলছে তো চলছে। ভালবাসার পথ বুঝি ফুরাবার নয়। মুখে মুখে ফুঁটছে কথার খই। কত যে রঙিন স্বপ্ন বোনা। নীল আকাশের নিচে যেন দুটি ফেলে আসা পৃথিবীর মায়াবী স্বপ্নভুক প্রাণী। হারিয়ে চলেছে দু’জন দুজনার মাঝে। উপরের নীল আকাশ কাছে ডাকছে যেন আপন করে। এখনি যে ধবল বক উড়ে গেল, তা যেন ওদের মন দুটোও নিয়ে গেল। ওই যে উড়ে গেল সাদা মেঘের দেশে। আহ‌্ যদি এ পথ না ফুরাত কোন দিন . . . .
   সারা দিন ঘুরে ঘুরে তারা চলে এল সাগর পাড়ে। দুজনই ক্লান্ত। দুপুর গড়িয়ে গেছে বেশ আগে। ঝাউ গাছের নিচে বসল ওরা। সামনে সুনীল সাগর। শির শির হাওয়া। রবি নীলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। চোখে রঙীন স্বপ্ন এসে ভীড় করে। জেগে দেখে গোধূলী বেলা, সূর্য বিদায় জানাচ্ছে তাদের। সৈকত নির্জন। কিছু দুরে কয়েকটা জেলে নৌকা, অল্প লোকজন আর কয়েক জন ফেরিওয়ালা। ওরা হাটতে শুরু করল। রবি একটা ঝিনুকের মালা নিল। কিছু পথ যেয়ে নির্জন সাগর কূলে বসল দুজন। সাগরের জল যেন ওদের ছুতে চায়।
                রবি নীলার দিকে তাকিয়ে দেখে ও হাসছে। রবি মালাটা নীলার চুলে বেধে দিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ হাসছে। চাদের আলোতে নীলা যেন আরো মায়াবী হয়ে ওঠেছে। তারা আবার হাত ধরে চলতে শুরু করল তীর ধরে। সাগরের বিশাল ঘেউ যেন মিলন আকাঙ্খা নিয়ে আঁছড়ে পড়ছে তীরে। রবি নীলাকে বুকে জড়িয়ে নিল। স্পর্শ করল তার সারা অংগ। নীলা বাঁধা দিল না। সাগর যেন ওদের স্বাগত জানাচ্ছে। তীরে বসে রবি নীলাকে দেখছে। সবুজ শাড়ীতে মায়াবী নীলা। রবির নীলা। ওরা হারিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নলোকে। যেন অন্য ভুবনের ছোয়া লেগে আছে নীলার সোনা অঙ্গে। নীলার আঁচল বাতাসে উড়ে এল রবির মুখের উপর। আঁচল সরিয়ে রবি দেখে, চাঁদ যেন তাদের পাহারা দিচ্ছে অনন্ত অম্বরে . . . .।

1 comment:

  1. অসাধারন গল্প। আমি অভিভূত।

    ReplyDelete

I wish your good comment for my blog.

See Photos

See Photos
আমার প্রিয় নদী . . .